হাওযা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, আয়াতুল্লাহ আলী রেজা আ'রাফি, ইসলামী সেমিনারিগুলোর পরিচালক, ১৪০৪-১৪০৫ শিক্ষাবর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে (রবিবার, ১৬ শহারিভর ১৪০৪, ক্বুমের ফাইযিয়া মাদ্রাসায়), ইমাম ও শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন করে এবং ইমাম আলীর (আ.) বাণীতে মহানবী (সা.)-এর বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন: ইমাম আলী (আ.) নাহজুল বালাগাহ-তে চল্লিশেরও বেশি স্থানে আল্লাহর রাসূল সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। এই চল্লিশটি আলো ঝলমলে বাণী মহানবীর একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে। সেই মহান নবীর প্রতিচ্ছবি, যার নূরের দীপ্তিতে বিশ্বে এক নতুন আন্দোলন এবং এক মহাবিপ্লবের সূচনা হয়েছিল। মহানবীর উদয়েই বিশ্ব আলোকিত হলো এবং মানবজাতির সামনে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। তিনি মানুষকে নির্মল ও বিশুদ্ধ জ্ঞান দান করলেন এবং মানবজাতিকে নতুন বার্তা দিলেন। মহানবীর আবির্ভাব ছিল এক নতুন সভ্যতার সূচনা, এক মহা অগ্রযাত্রা এবং তাওহীদ ও রিসালতের ইতিহাসে এক বিশাল জন্ম।
সেমিনারির পরিচালক আরো বলেন: ইমাম আলী (আ.) খুতবা ৯৫-এ বলেছেন:
«بَعَثَهُ وَ النَّاسُ ضُلَّالٌ فِی حَیْرَةٍ وَ حَاطِبُونَ فِی فِتْنَةٍ»
যখন নবী মানবজাতির মাঝে প্রেরিত হলেন এবং অদৃশ্য জগতের জানালা জাগতিক দুনিয়ার প্রতি উন্মুক্ত হলো, তখন ছিল এক অতি অন্ধকার সময়, বিভ্রান্তি ও পথভ্রষ্টতার যুগ। সবাই পথভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত ছিল এবং অজ্ঞতা ও বিভ্রান্তির কালো মেঘ দুনিয়াকে আচ্ছন্ন করেছিল।
«قَدِ اسْتَهْوَتْهُمُ الْأَهْوَاءُ وَ اسْتَزَلَّتْهُمُ الْکِبْرِیَاءُ»
দুনিয়ার মোহ ও শয়তানি খেয়ালিপনা বিশ্বকে আচ্ছন্ন করেছিল।
«وَ اسْتَخَفَّتْهُمُ الْجَاهِلِیَّةُ الْجَهْلَاءُ ...»
অজ্ঞতা বিশ্বকে আচ্ছন্ন করেছিল এবং মহানবী মানবজাতির জীবনের সবচেয়ে অন্ধকারময় সময়ে প্রেরিত হলেন।
এই রিসালতের বিস্ময়কর দিক হলো—বিশ্বের সবচেয়ে অন্ধকার সময়ে, ইতিহাসের সবচেয়ে অশুভ অধ্যায়ে, আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বপবিত্র মানবপ্রাণ উদ্ভাসিত হলেন এবং বিশ্বকে পরিবর্তিত করলেন। কিভাবে?
«فَبَالَغَ (صلی الله علیه وآله) فِی النَّصِیحَةِ ...»
তিনি সর্বোচ্চ পরামর্শ দিলেন, সত্যের পথে দৃঢ় থাকলেন, প্রজ্ঞা ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে মানুষকে আহ্বান করলেন।
আয়াতুল্লাহ আ'রাফি ব্যাখ্যা করলেন: মহানবীর এই শুভাকাঙ্ক্ষা, তাঁর জ্ঞান ও আধ্যাত্মিক সংগ্রাম, প্রতিরোধ ও স্থিতিশীলতা ইতিহাসকে পরিবর্তন করেছিল। পশ্চাদপদ আরব উপদ্বীপ জ্ঞান ও প্রজ্ঞার কেন্দ্রে এবং মানব সভ্যতার এক নতুন স্তরে রূপান্তরিত হয়েছিল। নবী এই মহান ঐশ্বরিক পতাকা উত্তোলন করেছিলেন।
তিনি আরো বলেন: ইমাম আলী (আ.) খুতবা ১০৮-এ নবী সম্পর্কে বলেন:
«اخْتَارَهُ مِنْ شَجَرَةِ الْأَنْبِیَاءِ ...»
নবী ছিলেন নবুয়তের মহান বৃক্ষের ফল। নবুয়ত ও রিসালতের ধারাটি ছিল নির্মল, নিষ্পাপ ও নির্ভুল। তিনি সময়ের দিক থেকে শেষ নবী হলেও বাস্তবে এই দীপ্তিমান ধারার শীর্ষে অবস্থান করেছিলেন। নবীই এই নবুয়তের মহান বৃক্ষের মূল ও ভিত্তি। আল্লাহ তাঁকে শ্রেষ্ঠ বংশ থেকে, সর্বাপেক্ষা পবিত্র বৃক্ষ থেকে নির্বাচন করেছিলেন এবং মানবজাতির জন্য তাঁকে উপহার করেছিলেন।
আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত হলো নবীর অস্তিত্ব। তিনি ছিলেন «الْخَاتِمِ لِمَا سَبَقَ وَ الْفَاتِحِ لِمَا انْغَلَقَ» — অর্থাৎ তিনি অতীতের রিসালতের সমাপ্তিকারী এবং যে দ্বারসমূহ মানবজাতির জন্য বন্ধ ছিল সেগুলোর উন্মোচনকারী।
ইমাম আলী (আ.) নবীকে এইভাবে বর্ণনা করেছেন:
«طَبِیبٌ دَوَّارٌ بِطِبِّهِ ...»
তিনি এমন এক চিকিৎসক যিনি হৃদয়ের অন্ধত্ব, কর্ণের বধিরতা ও জিহ্বার নীরবতা নিরাময় করতেন। তাঁর চিকিৎসা দ্বারা তিনি মানুষের গাফিলতি ও বিভ্রান্তির স্থানগুলোতে আলো পৌঁছে দিতেন। নবী একদিকে সুসংবাদদাতা, অন্যদিকে পাপ ও বিভ্রান্তি থেকে সতর্ককারী।
আপনার কমেন্ট